পৃথিবীতে বিভিন্ন পেশার মানুষ রয়েছে। প্রত্যেকটি মানুষই কোন না কোন কাজের সাথে জড়িত। সবাই আলাদা আলাদা পেশা নিয়ে বেঁচে আছে। ঠিক তেমনই একটি পেশার নাম হল ব্যবসা।
যারা ব্যবসা করেন তাদেরকে ব্যবসায়ী বলা হয়। ব্যবসার আবার অনেক ধরন রয়েছে। যেমন মুদি ব্যবসা, ইলেকট্রনিক্স পণ্যের ব্যবসা, কৃষিজ পণ্যের ব্যবসা ইত্যাদি নানান ধরনের ব্যবসা রয়েছে।
এ সমস্ত ব্যবসা করতে গেলে প্রয়োজন হয় মূলধনের। মূলধন ছাড়াও যেগুলো প্রয়োজন পড়ে তা হল ব্যবসা এর অভিজ্ঞতা, আচার-ব্যবহার, সততা এবং উদ্যম। একজন ব্যবসায়ী একদিনে সফলতা অর্জন করতে পারে না। ব্যবসায় সফল হতে গেলে অনেকগুলো বিষয় অনুসরণ করতে হয়।
আজকে আমরা আলোচনা করব ব্যবসায় সফল হওয়ার 10 টি কৌশল সম্পর্কে। জানতে হলে অবশ্যই আমাদের লেখা টি সম্পূর্ণ পড়বেন।
তো চলুন জানা যাক ব্যবসায় সফল হওয়ার 10 টি কৌশল সম্পর্কে।
১। গোছানো এবং পরিপাটি থাকুন:
যে কোন কাজের জন্য গোছালো মানুষ সব সময় সফলতা অর্জন করে। অগোছালো মানুষ কোন কাজেই সহজে সফলতা পায় না। তাই যদি কেউ সফল ব্যবসায়ী হতে চায় তবে তাকে প্রথমেই গোছালো এবং পরিপাটি হতে হবে। ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান কে সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ভাবে গুছিয়ে রাখতে হবে।
তবে ক্রেতার আকর্ষণ বাড়বে এবং আপনার প্রতিষ্ঠানের প্রতি আকর্ষিত হবে।একটি দোকানে বা ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন ধরনের পণ্য মজুদ থাকে। প্রত্যেক ধরনের পণ্য যদি আলাদা আলাদা সেল্ফ বা র্যাকে সুন্দর ভাবে গুছিয়ে রাখা হয় তবে ক্রেতার ক্রয়ের ক্ষেত্রে সুবিধা হয়। ফলে ক্রেতা সহজেই পণ্য নির্বাচন করতে পারেন। তাই যে কোন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের জন্য গোছালো পরিবেশ খুবই প্রয়োজনীয়।
২। পণ্যের বিস্তারিত বিবরণ রাখুন:
একটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন ধরনের এবং বিভিন্ন আকারের পণ্য মজুদ থাকে। আপনি যদি প্রত্যেক পণ্যের মূল্য এবং সেই পণ্যের বিস্তারিত বিবরণ পণ্যের সাথে অন্তর্ভুক্ত রাখেন , তবে ক্রেতার পণ্য ক্রয় করতে সুবিধা হয়। শুধু তাই নয় ক্রেতারা আপনার প্রতিষ্ঠান ঢোকা মাত্র পণ্য সম্বন্ধে বিস্তারিত জানতে আগ্রহী থাকে।
তাই আপনি যদি প্রতিটি পণ্যের বিস্তারিত বিবরণ পণ্যের সাথে সংযুক্ত রাখেন তবে আপনার কাজ আরও গোছালো হয়ে থাকবে। প্রতিটি পণ্যের বিস্তারিত বিবরণ রাখলে আপনার ব্যবসার হিসাব মিলাতে কোন রকম সমস্যা হবে না। তাই প্রত্যেকটি পণ্যের বিস্তারিত বিবরণ রাখার চেষ্টা করুন।
এতে করে আপনার ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের মালামালের হিসাব যেমন আপনার নথিভূক্ত থাকবে, ঠিক তেমনি আপনার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থা এবং লেনদেনও স্বচ্ছ থাকবে।
৩। প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব রাখুন:
ব্যবসায় করতে গেলে বা একজন সফল ব্যবসায়ী হতে হলে আপনাকে প্রতিদিন প্রতিনিয়ত প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হতে হবে। কারণ ব্যবসায় মহলে আপনার ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানেই একমাত্র প্রতিষ্ঠান নয়। আপনার মত অনেক ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা প্রতিদিন বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে তাদের পণ্য বাজারজাত করার জন্য।
আপনার মস্তিষ্ককে সক্রিয় করে তোলে প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব। প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব সব সময় সফলতাকে বয়ে আনে।
আপনি নিজের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি আপনার প্রতিদ্বন্দ্বী ব্যবসায়ীদের সম্পর্কেও মনোযোগী হতে হবে।
তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী আপনাকে নিজস্ব পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে তবেই আপনি সফল হতে পারবেন।
৪। ঝুঁকির সম্মুখীন হতে শিখুন:
ব্যবসা করতে গেলে অবশ্যই ঝুঁকির সম্মুখীন হতে হবে। সব সময় যে আপনার ব্যবসায় এর অবস্থা সমান থাকবে তা নয়। কখনো কখনো আপনি ঝুঁকির সম্মুখীন হবেন। কিন্তু তখন আপনাকে ভেঙে পড়লে চলবে না। মনে সাহস সঞ্চার করে আপনাকে ঝুঁকির মোকাবিলা করতে হবে।
প্রতিটি ব্যবসায়ী ঝুঁকির সম্মুখীন হয়ে থাকেন কিন্তু সফল ব্যবসায়ী যারা তারা ঝুঁকি নেয়ার সাথে সাথে ভবিষ্যৎ ফলাফল তৈরি করে ফেলেন। যার ফলে তারা সফল ব্যবসায়ী হয়ে ওঠেন।
প্রত্যেক ব্যবসায়ীকে ভবিষৎ পরিকল্পনা ঠিক করে রাখতে হবে। তাহলে যে কোনো ঝুঁকি বা সমস্যার সমাধান দ্রুত করতে পারবেন।
৫। ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে সৃজনশীলতা আনুন:
ব্যবসা করতে গেলে আপনার ব্যবসায় সৃজনশীলতা আনতে হবে। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে এবং বাজারের চাহিদা অনুযায়ী আপনার চিন্তা ভাবনার ধরন পরিবর্তন করতে হবে। প্রতিনিয়ত এই ব্যবসায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাড়ছে নতুন নতুন কৌশল তৈরি হচ্ছে। ফলে আপনি যদি আপনার ব্যবসায়ে সৃজনশীল চিন্তাভাবনার প্রতিফলন ঘটাতে পারেন তবে আপনি সফল হবেন।
ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে সফলতার দিকে নিয়ে যেতে আপনাকে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন কৌশল অবলম্বন করতে হবে। তার জন্য প্রয়োজন হয় সৃজনশীল চিন্তাভাবনা।
৬। সৎ এবং মিষ্টভাষী হোন:
ব্যবসা করতে গেলে আপনাকে অবশ্যই সৎ এবং নিষ্ঠাবান হতে হবে। সাথে হতে হবে মিষ্টভাষী অর্থাৎ ক্রেতাদের সাথে সব সময় সদ্ব্যবহার এবং মিষ্টি ভাষায় কথা বলতে শিখুন। আপনার মিষ্ট ব্যবহারের ফলে ক্রেতারা আপনার দোকানে ভিড় জমাবে। দূরদূরান্ত থেকে আপনি ক্রেতাকে আপনার প্রতিষ্ঠানে আনতে পারবেন শুধুমাত্র সততা , নিষ্ঠা এবং আপনার সদ্ব্যবহারের জন্য।
একজন সফল ব্যবসায়ীর সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল সদ্ব্যবহার এবং নিষ্ঠাবান হওয়া। তাই নিজের সততার উপর একনিষ্ঠ থাকুন এবং আপনার ব্যবসাকে সুদুরপ্রসারি করার লক্ষ্যে স্বল্পমেয়াদী লক্ষ্য অর্জনে একনিষ্ঠ থাকুন।
৭। ত্যাগী মনোভাব রাখুন:
ব্যবসা করতে গেলে ত্যাগী মনোভাব থাকা প্রয়োজন। ব্যবসায় লাভ বা সফলতা অর্জনের জন্য অনেক সময় আমাদের অনেক কিছু ত্যাগ করতে হয়। যেমন: স্বার্থ , বেশি লাভ করার ধান্ধা ইত্যাদি।
একটি ব্যবসা দাঁড় করানো সহজ নয়। আপনি একটি ব্যবসা শুরু করা মাত্রই ব্যবসা থেকে অধিক পরিমাণ অর্থ উপার্জন করবেন এমন ভাবা ঠিক নয়। এর জন্য প্রয়োজন কঠোর পরিশ্রম। আপনার ব্যবসার উন্নতির জন্য অনেক কিছু ত্যাগ করা প্রয়োজন পড়বে যেমন : পরিবার বন্ধুদের সাথে কম সময় ব্যয় করতে হবে, বেশি লোভ করা যাবে না, ব্যবসা এর বাইরে অযথা সময় ব্যয় করা যাবে না। সব সময় ব্যবসার প্রতি একনিষ্ঠ মনোভাব থাকতে হবে। তবেই আপনি সফল ব্যবসায়ী হয়ে উঠবেন।
৮। অভিজ্ঞতা সঞ্চার করুন:
জীবনে সফল হতে গেলে বহুমাত্রিক অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করার প্রয়োজন পড়ে। ঠিক তেমনি ব্যবসায় সফল হতে গেলে আপনাকে অভিজ্ঞতা সম্পন্ন হতে হবে। আপনার অভিজ্ঞতা যত বেশি হবে আপনার সাফল্যের সম্ভাবনা তত বেশি হবে। সব সময় আপনাকে নতুন নতুন অভিজ্ঞতা সম্বন্ধে ধারণা নিতে হবে।
অভিজ্ঞতার পাশাপাশি আপনাকে চ্যালেঞ্জিং মনোভাবাপন্ন হতে হবে। আপনি যত বেশি চ্যালেঞ্জিং হবেন ততই আপনার প্রতিষ্ঠানের উন্নতির দিকে ধাবিত হবে।
৯। উন্নত সেবা প্রদান করুন:
ব্যবসায় সফলতা অর্জনের জন্য উন্নত সেবা প্রদান করা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। উন্নত মানের সেবা আপনার ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের জন্য যেমন সুনাম বয়ে আনবে ঠিক তেমনি আপনি সাফল্যের দিকে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে অগ্রসর হবেন। এটা ব্যবসা এর একটি অন্যতম কৌশল। আপনি ভোক্তাদের যদি উন্নত মানের সেবা প্রদান করেন তবে তারা আপনার কাছে বারবার পণ্য ক্রয়ের জন্য আসবে। ফলে আপনার প্রতিষ্ঠান ক্রেতাদের নিকট জনপ্রিয় হয়ে উঠবে।
কখনোই আপনি ভোক্তাদের নিম্ন মানের সেবা প্রদান করবেন না। উন্নত মানের সেবা প্রদান করা একজন সফল ব্যবসায়ীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
১০। মানসম্মত ধারাবাহিকতা বজায় রাখুন:
আপনার ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের মান সব সময় ধারাবাহিকতার উপর রাখার চেষ্টা করুন। আপনি যত বেশি প্রতিষ্ঠান মান বাড়াতে পারবেন আপনি ততোই সফল হবেন। সব সময় ধারাবাহিক ভাবে আপনি আপনার কর্ম পরিকল্পনা কে বাস্তবায়ন করুন। যেটা আপনার ক্রেতাদের মাঝে বিশ্বাস সঞ্চার করতে সাহায্য করবে। ব্যবসায় সফল হতে গেলে ধারাবাহিকতা বজায় রাখাও একটি অনন্য কৌশল। তাই আপনি শুরু থেকে ধারাবাহিকভাবে আপনার ব্যবসার পরিকল্পনা তৈরি করবেন এবং সেই মোতাবেক ভোক্তাদের সেবা প্রদান করবেন।
শেষ কথা:
উপরিউক্ত আলোচনা থেকে বুঝতেই পারছেন যে একটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান কে সফলতার দিকে নিয়ে যেতে আপনাকে কি কি ধরনের কৌশল অবলম্বন করতে হবে।
আপনি যত বেশি পরিশ্রমী এবং কৌশল অবলম্বন করে ব্যবসায়ী হবেন তত বেশি সফল হবেন। আলোচনার বিষয়বস্তু আপনার ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা যায়।
আলোচ্য উপাদানগুলোকে আপনি যদি আপনার ব্যবসায়ের কাজে লাগান তবে আপনি সফল হবেন শতভাগ। তাই নিজেকে একজন দক্ষ পরিশ্রমই এবং সফল ব্যবসায়ী হিসেবে গড়ে তুলতে তথ্যগুলি অনুসরণ করুন। ফেসবুক পোস্ট বুস্ট এর জন্য যোগাযোগ করুন: 01796919199