ফেসবুক বুস্ট এর মাধ্যমে পণ্য বিক্রি করার কৌশল!

ফেসবুকে ব্যবসায় সফল হওয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হলো ফেসবুক বুস্ট। কৌশলগত ও সঠিক উপায়ে ফেসবুক বুস্টিং আপনার ব্যবসায়িক সফলতা অর্জনের চাবিকাঠি হিসেবে কাজ করে।

ফেসবুক বুস্ট কি? ফেসবুক বুস্ট কেন গুরুত্বপূর্ণ?

ফেসবুক বুস্ট বলতে ফেসবুক বিজ্ঞাপণ বুস্ট কে বোঝানো হয়। কোনো ব্যবসাকে খুব দ্রুত হাজার হাজার মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিতে ফেসবুক বুস্ট গুরত্বপুর্ণ ভূমিকা পালন করে। যা আপনার ব্যবসার সফলতার মাইলফলক রুপে কাজ করে।

ফেসবুক বুস্ট ব্যবহার করে পণ্য বিক্রি বৃদ্ধির কৌশল জানতে পুরো লেখাটি পড়ে ফেলুন।

ফেসবুককে সাধারণত দুই পদ্ধতির বিজ্ঞাপণ মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হয়- অরগানিকপেইড।

সাধারণ বা অরগানিক মাধ্যমে ফেসবুককে কোনো টাকা না দিয়ে মানসম্মত বিষয়বস্ত বা কনটেন্ট এর সাহায্যে কাস্টমার এনগেজমেন্ট করা হয়। এটি সময়সাপেক্ষ এবং এ ক্ষেত্রে বেশি মানুষের কাছে পৌছানো যায় না। যা আপনার ব্যবসায় সফল না হওয়ার অন্যতম কারণ।

অন্যদিকে, পেইড পদ্ধতিতে ফেসবুক বুস্ট এর মাধ্যমে কিছু অর্থ খরচ হলেও এটি আপনাকে নিশ্চিত সফলতা এনে দেয়। এর মাধ্যমে প্রত্যেক ফেসবুক ব্যবহারকারীর নিউজফিডে আপনার বিজ্ঞাপণটি দেখানো হয়। আপনার ব্যবসা বা ব্রান্ড এর ফলোয়ার বাড়ানো, নতুন গ্রাহক সৃষ্টি এবং দ্রুত পরিচতি লাভের জন্য ফেসবুক বুস্টের মাধ্যমে দেয়া পেইড বিজ্ঞাপণ এর বিকল্প নেই।

ফেসবুক বুস্টের মাধ্যমে অনলাইনে পণ্য বিক্রি বৃদ্ধির সেরা ৭ টি কৌশল

১. সঠিক পণ্য নির্বাচন  

অনলাইনে পণ্য বিক্রি বৃদ্ধির জন্য প্রতিনিয়ত অনেকেই প্রচুর অর্থ ব্যয় করে তাদের ফেসবুক বিজ্ঞাপণ বুস্ট করে থাকে। কিন্তু তাদের মধ্যে খুব কম সংখ্যক আশানুরুপ ফলাফল পায়। এর অন্যতম কারণ হলো সঠিক পণ্য নির্বাচনে ভুল করা।

ফেসবুকে আপনি কিন্তু একাই ব্যবসা করছেন না। পৃথিবীর সব নামিদামি কোম্পানি সহ লক্ষ লক্ষ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ফেসবুক পেজের মাধ্যমে তাদের ব্যবসা পরিচালনা করছে। তাই আপনার উপযোগি মার্কেট রিসার্চ না করেই ব্যবসায় নামা আপনার ব্যর্থতার বড় কারণ হতে পারে।

আপনি যদি নির্দিষ্ট কোনো পণ্য নিয়ে কাজ করেন তাহলে আপনার পণ্যের চাহিদা ও প্রতিদ্বন্দী ব্যবসায়িদের সম্পর্কে খুটিনাটি জেনে নিতে হবে। ফেসবুক এড ম্যানেজারের সাহায্যে আপনি এ কাজটি খুব সহজেই করে নিতে পারবেন।

পরীক্ষামূলকভাবে, আপনার পণ্যের চাহিদা জানার জন্য ফেসবুক এড ম্যনেজারে গিয়ে Inertest অপশনে সার্চ করলে আপনাকে পণ্যের ক্যাটাগরির সাথে সম্পৃক্ত বিভিন্ন পেজ এবং অডিয়েন্স (শ্রোতা) দেখানো হবে।

Facebook Interest

এক্ষেত্রে টার্গেটেড ক্যাটাগরি বাছাই করতে পারলে আপনি অডিয়েন্স সম্পর্কে একটি স্বচ্ছ ধারণা পাবেন। উদাহরণস্বরুপঃ পোশাক একটি বিস্তৃত ক্যাটাগরি। অন্যদিকে পুরুষদের পোশাক একটি সংক্ষিপ্ত এবং টার্গেটেড ক্যাটাগরি।

এভাবে আপনার পণ্যের বিষয়বস্তুর উপর নির্ভর করে কয়েকটি টার্গেটড ক্যাটাগরি বাছাই করতে পারলে আপনার পেজের জন্য অনুরক্ত ভক্তদের একটি ফ্যানবেজ তৈরিতে সক্ষম হবেন।

২. আপনার পেজের ভিজিটরদের কাছে পণ্যের পুনঃ প্রচার করুন

আপনার সাইটে প্রথমবারের মত ভিজিট করা সব মানুষই কিন্তু আপনার পণ্য ক্রয় করবে না। এমনকি আপনার বাছাইকৃত টার্গেটেড অডিয়েন্সের কাছে আপনার বিজ্ঞাপণ প্রকাশ করা সম্ভব হলেও, প্রথমবার ভিজিট করেই আপনার পণ্য ক্রয় না করার এমন অনেক কারণ থাকতে পারে।

কিন্তু এই বিপুল সংখ্যক ভিজিটরদের আপনার পণ্যের উপর কিছু না কিছু আগ্রহের কারণেই তারা কিন্তু আপনার পেজটি ভিজিট করেছে। তাই এই বিপুল সংখ্যক ভিজিটরদের জন্য একটি কাস্টম অডিয়েন্স তৈরি করুন।

আপনার পেজের ভিজিটরদের নিয়ে কাস্টম অডিয়েন্স তৈরির ফলে এখন সহজেই আপনার পেজ ভিজিটরদের ক্রেতায় রুপান্তরিত করতে পারবেন। এর মানে আপনি সেই সব অডিয়েন্সদের টার্গেট করছেন যারা আপনার পেজ ভিজিট করেছে কিন্তু এখনও কোনো পণ্য ক্রয় করে নি।

আপনার পণ্যের রি-মার্কেটিং এর জন্য এমন একটি সময় বেছে নিন যখন প্রায় সবাই বেতন পায়। বিশেষ করে মাসের শুরুর দিকের সময়কে এজন্য বেছে নিতে পারেন। আপনার পেজে প্রথমবার ভিজিট করা অনেকই হয়তো আর্থিক সমস্যার কারণে পণ্য ক্রয় করতে পারে নি, তারা এখন পারবে।

৩. ভার্চুয়াল ওয়ালেটে পড়ে থাকা পণ্যগুলো বিক্রির চেষ্টা করুন

আপনার ব্যবসাকে আরও একধাপ এগিয়ে নিতে বিষেশত এমন লোকদের টার্গেট করুন যারা আপনার পেজে ভিজিট করে পণ্য কেনার জন্য ভার্চুয়াল ওয়ালেটে ফেলে রেখে চেকআউট করেছে।

ভার্চুয়াল ওয়ালেটে রাখা এ পণ্যগুলো পুনঃরায় বিক্রি করতে পারা আপনার ব্যবসার জন্য লাভজনক হতে পারে। কারণ ভার্চুয়াল ওয়ালেটে এ রাখা এসব পণ্য বিক্রয় করার জন্য আর মাত্র একটি ধাপ বাকি।

তাই ভার্চুয়াল ওয়ালেটে রাখা পণ্যগুলো বিক্রয়ে কাস্টম অডিয়েন্স তৈরি করুন। তারা আপনার পণ্যগুলো কিনতে ভুলে গেছে কি না তা জানান। পণ্যগুলো কেনার জন্য ক্রেতাদের বিজ্ঞাপণইমেইল এর মাধ্যমে জানানোর পাশাপাশি ছবিলিঙ্ক যুক্ত করুন যাতে তারা সহজেই পণ্যটি কিনতে পারে।

আপনি যদি বুদ্ধিমান হন তাহলে আপনার ক্রেতাদের জন্য এর সাথে স্পেশাল কিছু অফারের ব্যবস্থা করুন। এতে করে আপনার ব্রান্ডের থেকে যারা একটু দূরে সরে গেছে তাদের ফিরে আসার সম্ভবনা বাড়বে।

৪. আপনার গ্রাহকদের কাছে Upsell করুন

আপনার বর্তমান ক্রেতাদের কাছে আরও বেশি পণ্য বিক্রয় করার জন্য আপনার ইমেইল তালিকাটি ভাগ করে নেওয়া একটি স্মার্ট পদ্ধতি। ফেসবুক বিজ্ঞাপণের ক্ষেত্রেও আপনি এ ধারনাটি ব্যবহার করতে পারেন।

ধরুন, কেউ আপনার কাছে থাকা “ক”, “খ” ও “গ” পণ্যের মধ্যে শুধু “ক” ও “খ” পণ্যটি ক্রয় করল। তাহলে আপনি “গ” পণ্যটি ক্রয় করতে পারে এমন লোকদের টার্গেট করে একটি নতুন প্রচারণা চালু করতে পারেন।

ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আপনার কাছ থেকে একাধিকবার পণ্য কিনেছেন এমন ব্যক্তির আপনার ব্রান্ড সম্পর্কে পজিটিভ ধারণা আছে। যা আপনার পণ্য খুব সহজেই বিক্রি করতে সাহায্য করবে।

এ ধরণের ক্যাম্পেইনের প্রচারণা থেকে আপনি লাভজন ফলাফল পেতে পারেন। ইতিমধ্যেই ব্যবসায়িক ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে থাকলে এ কৌশলটি আপনার বিবেচনা করা উচিত।

৫. আপনার ফেসবুক পেজ ও ওয়েবসাইট SEO করুন

শুধুমাত্র ফেসবুকে পেজ নিয়ে কাজ করলে আপনি সফল নাও হতে পারেন। কারণ ক্রেতারা সাধারণত দুইটি সাইট থেকে আর্কষিত হয়; সোশ্যাল মিডিয়াগুগল। তাই ফেসবুক পেজের পাশাপাশি আপনার ওয়েবসাইট যুক্ত করুন।

কিন্তু শুধু ফেসবুক পেজ আর ওয়েসাইট খুলে বসে থাকলেই আপনি সফল হবেন তা কিন্তু নয়। আপনার পেজ বা ওয়েবসাইটে যদি ট্রাফিক না আসে তাহলে আপনার আশানুরুপ সাফল্য কখনোই পাবেন না।

গবেষণায় দেখা গেছে অধিকাংশ সার্চ ইঞ্জিন ট্রাফিক প্রথমদিকে থাকা ৫ থেকে ৭ টি ওয়েবসাইট পেয়ে থাকে। তাই আপনার পেজ বা ওয়েবসাইটে অর্গানিক ট্রাফিক নিয়ে আসার জন্য সার্চ ইঞ্জিনের প্রথমদিকে রাখতে SEO করুন।

Search Engiene Optimization (SEO) হলো মূলত অনেকগুলো দক্ষতার সংমিশ্রণ ঘটিয়ে আপনার পেজকে সার্চ ইঞ্জিনের টপ লিস্টে নিয়ে আসার একটি কৌশল। বেশ কয়েকভাবে করা গেলেও এখানে SEO করার ৩ টি জনপ্রিয় পদ্ধতি দেখানো হয়েছে-

  • On Page SEO
  • Off Page SEO
  • Content

এই পদ্ধতিগুলোর মাধ্যমে আপনার ফেসবুক বা ওয়েবসাইট পেজের পারফর্মন্স (Title Tag, Description, Meta Tag, Page Speed, URL’s, Backlinks, Content) অনেক ডেভলপড করা হয়। যার ফলে আপনার পেজ সার্চ ইঞ্জিনের টপ লিস্ট আসায় আপনি অনেক বেশি অর্গানিক ট্রাফিক পান যা আপনাকে অধিক পণ্য বিক্রির নিশ্চয়তা দেয়।

পাশাপাশি vise-varsa উপায়ে আপনার ফেসবুক পেজ ভিজিটরদের ওয়েবসাইটে এবং ওয়েবসাইট ভিজিটরদের পেজে নিয়ে আসতে পারবেন। যা আপনার ক্রেতার সংখ্যা নিঃস্বন্দেহে বাড়িয়ে তুলবে।

৬. আপনার ব্রান্ডের জন্য রেফারেল তৈরি করুন

ফেসবুক এড আপনার গ্রাহকদের পুনঃরায় পণ্য কেনার জন্য উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি তাদের বন্ধু-বান্ধবকেও আপনার গ্রাহক হওয়ার জন্য আগ্রহী করে তোলে। এজন্য আপনার ব্রান্ডের জন্য রেফারেল প্রোগ্রাম তৈরি করুন।

ফেসবুক নিউজফিডে আপনার পপ-আপ রেফারেল পদ্ধতি চালু করা গেলে নতুন গ্রাহক তৈরিতে তা অসাধারণ ফলাফল এনে দিবে। রেফারেল প্রোগ্রামের মাধ্যমে আপনার বর্তমান অডিয়েন্সের পরিচিত বন্ধু-বান্ধব, পরিবার ও প্রিয়জনদের এনগেজমেন্ট করা সহজ হবে।

বর্তমানে অধিকাংশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রেফারেল প্রোগ্রামের মাধ্যমে অনেক বড় পরিমাণ নতুন অডিয়েন্স নিয়ে আসে। যারা পরবর্তীতে তাদের পণ্য বিক্রির সুইচ ব্যংক হিসেবে কাজ করে।

এছাড়াও আপনি চাইলে আপনার বর্তমান গ্রাহকদের জন্য আপনার পণ্যের উপর একটি রিভিউ ভিডিও করার বিনিময়ে স্পেশাল মূল্যছাড়ের ব্যবস্থা করতে পারেন।

এসব ভিডিও রিভিউ ব্যবসায়িক স্বচ্ছতার প্রমাণ হিসেবে আপনার পেজে থাকবে। যা আপনার পেজ ও ব্রান্ডকে গ্রাহকদের কাছে আর্কষণীয়, বিশ্বস্তনির্ভরযোগ্য করে তুলেবে।

৭. Lookalike Audience ব্যবহার করুন

আপনার যদি কয়েকশ গ্রাহকের তালিকা থাকে তা দুর্দান্ত। কিন্তু তা যদি কয়েক হাজার গ্রাহকের তালিকা হয় তাহলে তা হবে অসাধারণ।

এটি ফেসবুকে আপনার ক্রেতাদের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ লোকদের নিয়ে Lookalike অডিয়েন্স তৈরিতে সহায়তা করে।

এক্ষেত্রে সম্ভাব্য ক্রেতার ব্যপারে আপনার কাছে যত বেশি তথ্য থাকবে আপনার Lookalike অডিয়েন্সের ফলাফল ততো বেশি নির্ভুল হবে।

যদি আপনার পণ্য-সামগ্রী এনগেজমেন্ট তৈরি করতে সক্ষম হয় তাহলে এটা একইভাবে আপনার Lookalike অডিয়েন্সের সাথেও কাজ করবে।

আপনার Lookalike অডিয়েন্সকে প্রথমেই আপনার পণ্য-সামগ্রীতে পাঠানোর চেষ্টা করুন, এরপর রি-মার্কেটং করার জন্য তাদের আপনার পেইজে পাঠান।

ফেসবুক বুস্টের মাধ্যমে আপনিও আপনার পণ্য বিক্রি করে সফল হতে পারবেন। শুধু প্রয়োজন আপনার একটু কৌশলী ও আত্মবিশ্বাসী হওয়া।

আপনার ব্যবসার বা পণ্যের সঠিক মার্কেটিং করতে যোগাযোগ করতে পারেন আমাদের সাথে। আমারা FizDigital. আমারা আপনার ব্যবসার জন্য কাজ করে থাকি। বিস্তারিত জানতে কল করুন 01796919199 এই নাম্বারে।